খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকাতে পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন: লুটপাটে ভঙ্গুর বাংলাদেশের আর্থিক খাত

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে; মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কারণে ও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হবে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা শুল্কের কারণে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ তিনটি চ্যালেঞ্জের কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি আসবে না। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে টাকার জোগানের বড় অংশই দিচ্ছে ব্যাংক খাত। অথচ গত সরকারের আমলে ব্যাপক লুটপাটের কারণে আর্থিক খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে আর্থিক খাতকে পুনরুদ্ধার করতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে বেশকিছু সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর বাংলাদেশের দারিদ্র্য হার বাড়তে পারে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চাকরি হারানো ও অর্থনীতিতে ধীরগতি। শুধু দারিদ্র্যই নয়, বাড়তে পারে বৈষম্যও। তবে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও রাজস্ব সংস্কার এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি কমাতে ১০টি বিষয় গুরুত্ব দিতে বলেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটের কারণে আর্থিক খাতের অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। পারিবারিক সম্পর্ক ব্যবহার করে ব্যাংক খাতে লুটপাট করার নজিরও রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২২ সালে তা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা যাদের দৈনিক আয় ২ ডলার ১৫ সেন্টের নিচে ছিল, তার হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। ফলে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও ৩০ লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ২০২৬ সালে গিয়ে দারিদ্র্যের হার কমতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে ৯ বছরে উচ্চশিক্ষিত বেকার বেড়েছে ৩ গুণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিুবিত্ত মানুষকে তাদের আয়ের বড় অংশ দিয়ে নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। স্বল্পদক্ষ শ্রমিকদের মজুরি ২ শতাংশ এবং উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের মজুরি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতের অমিল হলে উত্তেজনা বাড়বে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিলেও পুলিশবাহিনী পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এটি না হলে নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। এসব কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ব্যাংক খাতের ঝুঁকি কমাতে ১০টি বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। ঝুঁকি কমিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে ব্যাংক খাতের নীতি কাঠামো উন্নত করতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি প্রয়োজন। আমানত সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক পুনর্গঠন, সমন্বিত দেউলিয়া আইন প্রণয়ন, ব্যাংকিং আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, জরুরি প্রয়োজনে তারল্য সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি নীতি কাঠামো তৈরি, ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাগুলোর অনুশীলন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থাকবে। ২০২৬ সালে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। সংস্থাটির মতে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শ্রমবাজারের মন্দার কারণে প্রতি পাঁচ পরিবারের মধ্যে তিনটি সঞ্চয় ভেঙে তাদের আর্থিক চাপ মোকাবিলা করছে। তবে প্রতিবছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বিদেশে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও রেমিট্যান্স পাওয়া পরিবারগুলোর আর্থিক চাপ কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। গত বছর ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বিনিয়োগ কমে যাওয়া, নীতিগত অনিশ্চয়তা, ঋণের উচ্চ সুদহার ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিু ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বার্ষিক উন্নয়ন খরচ ২৪ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। মূলধনি পণ্য আমদানি ১২ শতাংশ কমেছে। এসবই দুর্বল বিনিয়োগ পরিস্থিতিকেই তুলে ধরে। তা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স বেশি আসায় এবং পোশাক রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার কমেছে। রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল আছে।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হবে বলে মনে করছে। আর্থিক খাতের সংস্কারের সফল বাস্তবায়ন, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও ব্যবসার পরিবেশ আরও স্থিতিশীল করা গেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/ টিএ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!